নলেজ শেয়ার

বিপদ দেখলেই উটপাখির বালিতে মাথা লুকানোর দাবিটি সত্য নয়

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ ০৩:৩৬ PM

বিশ্বের বৃহত্তম পাখি  Ostrich বা উটপাখিকে নিয়ে একটি ধারণা প্রচলিত আছে বহুকাল থেকে, সেটি হচ্ছে উটপাখি বিপদ দেখলে বালির ভেতর মাথা লুকিয়ে ফেলে। এবিষয়টি সত্য দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককেই বিভিন্ন সময় পোস্ট করতে দেখা যায়। এমন দাবিতে বেশ কিছু পোস্ট সামনে আসলে বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট। চলুন দেখে নেয়া যাক অনুসন্ধানে মূলত কী পাওয়া গেল। 

ভাইরাল তথ্যঃ
আগস্ট ৪, ২০২১ তারিখে mKiddo নামক একটি কিডস লার্নিং অ্যাপের ফেসবুক পেজ থেকে বিষয়টি  শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "... … বিপদ দেখলে উটপাখি কি করে জানো? টুপ করে গর্তের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে ফেলে! … …”

চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ  
অনুসন্ধানের শুরুতেই গুগল কী-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চেক ফ্যাক্ট টিম উটপাখি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছে।

উইকিপিডিয়ায় প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ৫ থেকে ৫০টি সদস্যের যাযাবর দলে উটপাখি ঘুরে বেড়ায়। বিপদে পড়লে উটপাখি সাধারণত শুয়ে লুকিয়ে পড়ে অথবা দৌড়ে পালিয়ে যায়। তাছাড়া কোণঠাসা হয়ে পড়লে শক্তিশালী পা দিয়ে লাথি দেয় বা শক্ত ঠোঁট দিয়ে ঠোকর দেয় বলে উল্লেখ আছে।  

তাছাড়া সান ডিয়োগো চিড়িয়াখানা উটপাখি নিয়ে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে এর স্বভাব, বাসস্থান, বংশবিস্তার নিয়ে একটি গবেষণামূলক আর্টিকেল প্রকাশ করে। তাদের সেই আর্টিকেলের তথ্য অনুযায়ী, যখন একটি প্রাপ্তবয়স্ক উটপাখি বিপদে পড়ে, তখন এটি এর নখরযুক্ত পা দিয়ে শক্তিশালী  আক্রমণ করে যা একটি সিংহকে হত্যা করার জন্য যথেষ্ট। 

পরবর্তীতে উটপখির বালিতে মাথা লুকানোর ব্যাপারে আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান চালালে আমেরিকান অসট্রিচ অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত একটি আর্টিকেল সামনে আসে, যেখানে উল্লেখ করা হয়- 

উটপাখির দাঁত না থাকায় খাবার হজমে সহায়ক হিসেবে এদের ছোট ছোট পাথর গিলতে হয়। এর জন্য তারা মাটি খুড়ে বা গর্ত থেকে পাথর বের করে আনে। আবার অনেকসময় পোকামাকড় খুঁজতে বা খনিজ লবণ খুঁজতেও তারা মাটির নিচে মাথা দেয়। এই সময় তাদের দেখে মনে হতে পারে তারা বালিতে মাথা গুঁজে আছে। 

এছাড়া শরীরের আকারের তুলনায় উটপাখির মাথাটি ছোট। এদের মাথার অংশটি ধূসর ও  হালকা  রঙের হওয়ায় এরা বসে থাকলে দুর থেকে দেখে এদের মাথা বা গলার অংশ বালি থেকে আলাদা করা যায় না। ফলে মনে  হতে পারে এরা বালিতে মাথা গুঁজে আছে।  

তাছাড়া বালিতে মাথা না গুঁজলেও উটপাখি তাদের ডিম বালিতে গুঁজে রাখে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ আছে। বংশবৃদ্ধির সময় পূর্ণবয়স্ক উটপাখি মাটিতে ৬-৮ ফিট প্রস্থের ২-৩ ফিট গভীর গর্ত তৈরি করে তাতে ডিম পাড়ে। উটপাখি গর্তে ডিম পাড়ার পর ডিম বালি চাপা দিয়ে দেয়। তারপর বাবা এবং মা উটপাখি দুজনই পালাক্রমে ডিম ফোঁটার আগ পর্যন্ত দিনে কয়েকবার মাটির ভেতর মাথা ঢুকিয়ে নিজেদের ঠোঁট ব্যবহার করে ডিমগুলোকে উল্টে দেয়, যাতে সবদিকে সমান পরিমাণে তাপ লাগে। এই সময় হয়ত তাদের দেখে মনে হতে পারে তারা বালিতে মাথা গুঁজে আছে।  

তাছাড়া বিজ্ঞানভিত্তিক এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম Science Bee তাদের ফেসবুক পেজে দেয়া একটি পোস্টেও বিপদে পড়লে উটপাখির বালিতে মাথা লুকানোর বিষয়টি মিথ্যা উল্লেখ করে এই একই তথ্য প্রকাশ করেছে।    

সুতরাং উপরোক্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, বিপদে পড়লে উটপাখি গর্তে মাথা লুকায় দাবিতে যে পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ভাইরাল হয়ে আসছে তা সত্য নয়। বরং উটপাখি কোনভাবে নিজের বিপদ বুঝতে পারলে আক্রমণ করে শত্রুকে কাবু করে ফেলার সক্ষমতা রাখে

মন্তব্য (0)


দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

টাকার বিপরীতে কেনো বাড়ছে ডলারের দাম?
আগস্ট ০৫, ২০২২ ০৩:২৭ PM
আকাশে উড়ে গেলো হাওরের পানিঃ কি ঘটেছিলো হাকালুকিতে?
জুলাই ২৭, ২০২২ ০৮:৫৫ AM