নলেজ শেয়ার

টাকার বিপরীতে কেনো বাড়ছে ডলারের দাম?

প্রকাশ: আগস্ট ০৫, ২০২২ ০৩:২৭ PM

সম্প্রতি বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং খোলা বাজারে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে চলছে ব্যাপকভাবে। মার্কিন ডলারের এই মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সংবাদ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এছাড়া ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। আন্তর্জাতিক বাজারসহ বাংলাদেশের টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের এই দাম বৃদ্ধির মূল কারণগুলো জানার চেষ্টা করেছে টিম চেক ফ্যাক্ট।

গত জুলাই ২৬, ২০২২ তারিখে Raj Tv নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়ে খোলা বাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড হিসেবে ডলারের দাম ১১২ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  

খোলা বাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড হিসেবে ডলারের দাম ১১২ টাকা

এরকম আরও ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

খোলা বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি বা দরপতন নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং খোলা বাজার উভয় জায়গাতেই টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে চলেছে। পৃথিবীজুড়ে ডলারের এই উঠানামা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিশ্বব্যাপী ডলারের একক আধিপত্য যেমন এর পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে আবার বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খোলা বাজারে অনেক সময় ডলার কারসাজিও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে কেন ডলারের এই মূল্যবৃদ্ধি? দেখে নেয়া যাক চেক ফ্যাক্ট এর বিস্তারিত প্রতিবেদনে।  

বিশ্বব্যাপী ডলারের একক আধিপত্যের কারণ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময় থেকেই ইউরো এবং ব্রিটিশ পাউন্ডের তুলনায় ডলার ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে স্থান করে নেয়। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইউরোপসহ এশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়তে শুরু করে। ফলে নতুন আর্থিক ব্যবস্থার রূপরেখা নির্ধারণে সেসময় বিশ্বব্যাংকের পদক্ষেপে ১৯৪৪ সালের ১ জুলাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী মিত্রশক্তির ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের শহর ব্রেটনউডসে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তীব্র মতানৈক্যের পর যে রূপরেখাটি চূড়ান্ত হয়, তার নাম ছিল ব্রেটনউডস ফাইনাল অ্যাক্ট।

টাকার বিপরীতে কেনো বাড়ছে ডলারের দাম

ব্রেটনউডস ব্যবস্থায় বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে ‘পার ভ্যালু’সম্পর্কে তিনটি বিধান রাখা হয়। ‘পার ভ্যালু’ মানে ১ মার্কিন ডলার সমান অন্য যেকোন দেশের মুদ্রায় কত হবে বা অন্য যেকোন দেশের ১ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ মুদ্রার মান মার্কিন ডলারে কত হবে।


১. প্রতিটি দেশ মার্কিন ডলারের সঙ্গে তাদের পার ভ্যালু বা বিনিময় হার ঘোষণা করবে।

২. এভাবে ঘোষিত পার ভ্যালুর উভয় পাশে দেশীয় মুদ্রার বিনিময় হারের হেরফের ১ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে।

৩. আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুমোদন ছাড়া পার ভ্যালু পরিবর্তন করা যাবে না।

মূলত ব্রেটনউডস ব্যবস্থায় সব মুদ্রাই মার্কিন ডলারে রূপান্তরযোগ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া এই ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষভাবে মার্কিন ডলার এবং পরোক্ষভাবে স্বর্ণকে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঠিক হয়, এক আউন্স সোনার দাম হবে ৩৫ ডলার। আর ডলারের আধিপত্যের শুরু মূলত এখান থেকেই।  

তাছাড়া যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউরোপের পুণর্গঠনে ‘মার্শাল প্ল্যান’বলে বিখ্যাত একটি পরিকল্পনায় ইউরোপিয়ান দেশগুলিকে ডলার সাহায্য দেওয়া হয়। এটি ছিল ডলার উত্থানের দ্বিতীয় কারণ। 

এছাড়া পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলারের ব্যবহার বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ’হিসেবে সবার আগে নিজের জায়গা করে নেয় মার্কিন ডলার।

এখনও পর্যন্ত ডলার যে কোন কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে অন্যতম নির্ভরযোগ্য সম্পদ। অর্থাৎ অন্য কোন মুদ্রা, সোনা বা শেয়ার তার দাম অস্বাভাবিক ভাবে পড়তে উঠতে পারে। কিন্তু সেই তুলনায় ডলার অনেকটাই স্থিতিশীল। এছাড়া ডলার হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে বেশি ছাপা হওয়া মুদ্রার মধ্যে একটি। একইসাথে পৃথিবীতে ডলার ব্যাপকভাবে অন্য দেশের মুদ্রা এবং পণ্যের লেনদেনে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ডলার কেনাবেচা করার জন্য বাজারটি যথেষ্ট সংগঠিত হওয়ায় পৃথিবীর প্রায় সমস্ত মানুষই ডলার কেনাবেচা করতে পারেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক কমোডিটি বাজারে ডলারের মাধ্যমেই কেনাবেচা করা হয়।

উপরোক্ত এই কারণগুলির ফলেই ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে তার জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে।

বাংলাদেশে যেভাবে ডলারের ব্যবহার শুরু হল

আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কম উন্নত দেশের মুদ্রার গুরুত্ব তেমন নেই। ফলে দৈনন্দিন বিনিময় হার ঠিক করার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো এক মুদ্রাকে মধ্যবর্তী মুদ্রা বা কারেন্সি হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। স্বাধীনতার ঠিক আগে এ দেশের মধ্যবর্তী মুদ্রা ছিল ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং। আর সরকারি বিনিময় হার ছিল পাউন্ডপ্রতি ১৩ দশমিক ৪৩ টাকা। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আর পাকিস্তান আমলের বিনিময় হার ধরে রাখেনি। বরং প্রতিবেশী ভারতের মুদ্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হয় পাউন্ডপ্রতি ১৮ দশমিক ৯৬৭৭ টাকা। তবে মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসেবে ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিংকেই ধরে রাখে। পরবর্তীতে ডলারের আধিপত্য বাড়ায় ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসেবে পাউন্ডের পরিবর্তে মার্কিন ডলারকে বেছে নেয়।

১৯৯৩ সালের ১৭ জুলাই বিনিময় হারের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। চলতি হিসাবে রূপান্তরযোগ্য করা হয় বাংলাদেশি মুদ্রাকে । এর মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের আংশিক উন্মুক্তকরণের সূচনা হয়। সে সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার বিপরীতে ডলারের জন্য প্রযোজ্য মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করে দিত এবং অনুমোদিত ডিলারদের জন্য ক্রয়-বিক্রয় হার নির্ধারণ করে দিত। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের মে মাস থেকে বাংলাদেশি মুদ্রার ভাসমান বিনিময় হার চালু করা হয়। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হয়। অর্থাৎ চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে ঠিক হয় মুদ্রার বিনিময় হার।    

যেকোন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ে যেভাবে

যেসব দেশ তাদের মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসেবে ডলার বেছে নিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সেসব দেশের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও একইসাথে আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয় কমে গেলে সেসব দেশের মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি পায়।  

তাছাড়া কোন দেশের কেন্দ্রীয় রিজার্ভের পরিমাণ কমে গেলে, ডলারের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে ক্রমাগত বাড়তে থাকলে এবং সরবরাহে সংকট দেখা দিলে সেই দেশের মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি পায়। একইসাথে কোন দেশের নিজস্ব নাগরিক বা বিদেশী পর্যটকদের মাধ্যমে নগদ ডলার আসার তুলনায় সেই দেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা, পড়াশোনা কিংবা পর্যটক হিসেবে নগদ ডলার নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়লে সেই দেশের মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।     

 

সম্প্রতি বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণ  

সাম্প্রতিক সময়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। করোনা পরবর্তী নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা এবং গত ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর শুধু বাংলাদেশ নয় বরং  বিশ্ব অর্থনীতিতেই চলছে চরম অস্থিরতা। এশিয়া, আফ্রিকা এমনকি ইউরোপেও এর প্রভাব বিরাজমান। এমন এক অবস্থায় ডলারের মূল্যবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। যে কারণগুলোর সমাধানও রয়েছে নিজেদের হাতেই।

সম্প্রতি বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণ

করোনা মহামারি শুরুর পর বিশ্ব অর্থনীতি উচ্চ মূল্যস্ফীতির সংকটে পড়লে, মূল্যস্ফীতির এই সমস্যা থেকে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে বিপুল আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছিল উন্নত দেশগুলো। ফলে চাহিদার সূচক অনেকটাই ওপরে উঠে যায়। আর চলমান এই মূল্যস্ফীতির প্রাথমিক কারণ এটাই।

অর্থনীতি উচ্চ মূল্যস্ফীতির সংকটে পড়লে

এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।       

যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলে সে দেশে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। কোন ধরণের ঝুঁকি ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করে ঝামেলা ছাড়াই সুদ প্রাপ্তির পথে হাঁটছেন তারা। তাছাড়া ভারতের মতো বৃহৎ দেশ থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিশ্বজুড়েই হার্ড কারেন্সি হিসেবে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ছে এবং দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হচ্ছে। একই ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশেও।

তবে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছে। গত মে ২১, ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির। ১ ডলারের জন্য পাকিস্তানে এখন খরচ করতে হয় ২০১ টাকা। এক বছর আগে ২০২১ সালের ১৯ মে লাগতো ১৬৫ টাকা। এ হিসাবে এই এক বছরে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির মান কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সরকারও ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছে। সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান কমেছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। অন্যান্য মুদ্রার মধ্যে এই এক বছরে জলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন বা অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ব্রিটিশ পাউন্ড দর হারিয়েছে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ। জাপানি ইয়েনের দরপতন হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এছাড়া এক বছরে ডলারের বিপরীতে অষ্ট্রেলিয়ান ডলারের অবমূল্যায়ন হয়েছে ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং সাউথ আফ্রিকার মুদ্রা রেন্ডের দরপতন হয়েছে১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।

তাছাড়া বাংলাদেশে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে বর্তমানে যা হচ্ছে তা হল Balance of Payment সংকট। একটি দেশের আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হলে আমরা বলি দেশটিতে বাণিজ্য ঘাটতি চলছে। কিন্তু বাণিজ্য ঘাটতিই সব কিছু নয়। রেমিট্যান্স, ঋণ, অর্থ পাচার, বৈদেশিক বিনিয়োগসহ যত প্রকার আন্তর্জাতিক লেনদেন আছে তাদের সকলকে একত্রে বলে Balance of Payment.

একটি দাঁড়িপাল্লার উভয় পাশ যেমন সমান হয়, তেমনি একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আদান প্রদানের উভয় পাশও সমান হতে হয়। কোন কারণে বৈদেশিক মুদ্রার অর্জন বেশি হলে তা রিজার্ভ হিসেবে সঞ্চিত থাকে আর আমদানি খরচসহ অন্যান্য কারণে ব্যয় বেশি হলে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় থেকে খরচ করে অথবা আইএমএফ বা বিদেশি রাষ্ট্র থেকে বৈদেশিক ঋণ নেয়। 

কিন্তু কোন দেশের যদি রিজার্ভ না থাকে বা ইচ্ছা করেই রিজার্ভ খরচ না করে, সেক্ষেত্রে ঋণ নিতে হবে অথবা মুদ্রার মান পড়ে যাবে। আর বাংলাদেশে ঠিক এই ঘটনাই ঘটছে।   

বাংলাদেশের একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুন-মার্চ) ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ৪ হাজার ২৭৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

লিংক-

https://bangla.bdnews24.com/economy/article2061725.bdnews#:~:text=রাষ্ট্রায়ত্ত%20অগ্রণী%20ব্যাংকের%20ব্যবস্থাপনা%20পরিচালক,লোকসানও%20গুনতে%20হচ্ছে।”

অর্থাৎ, এই নয় মাসে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। তার মানে ডলার খরচ বেড়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর রেমিটেন্স কমেছে ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ, দেশে ডলার যা আসছে, তার চেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বেশি।

৩। 

তাছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম, খাদ্য শস্যের দাম, গ্যাসের দাম বেড়েছে। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া থেকে সকল পণ্য আমদানিও বন্ধ রয়েছে। ফলে বেশি দামে আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলো বিক্রি হচ্ছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রভাবে এক কৃত্রিম ডলারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পণ্য ও সেবা কিনতে বেশি দামে ডলারের বিনিময় হচ্ছে। একইসাথে ডলারের বিপরীতে অন্য মুদ্রার দাম হ্রাস পাচ্ছে।      

 

 

ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব  

কোন দেশে ডলারের দাম বৃদ্ধি হলে সাধারণভাবেই সেই দেশের স্থানীয় মুদ্রার মুদ্রাস্ফীতি হয়। ফলে সেই দেশের সাধারণ নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। কারণ চিকিৎসা ও ভ্রমনসহ বিভিন্ন কারণে যারা বিদেশ যাবেন স্বাভাবিকভাবেই তাদের খরচ বেড়ে যাবে। একইভাবে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদেরও বেশি টাকা খরচ করতে হবে যা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিবে। 

তবে আমদানিকারকদের কিছুটা ক্ষতি হলেও, এ অবস্থায় লাভ হবে রপ্তানিকারকদের। তাছাড়া এতে লাভবান হবেন প্রবাসীরা যারা দেশে বৈদশিক মুদ্রা পাঠান। একইসাথে রপ্তানি নির্ভর ব্যাংক, ডলার মজুদকারীগণ এবং ফ্রী-ল্যান্সারগণও ডলারের দাম বৃদ্ধিতে লাভবান হন।

 

তবে আশার কথা এই যে, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসেই রেমিট্যান্সে রীতিমতো জোয়ার তৈরি হয়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে এসেছে ২.১ বিলিয়ন ডলার যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের পুরো সময়ের চেয়েও ৫ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সের এই প্রবাহে মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সহ অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া বর্তমান চাপ অনেকাংশে কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

মন্তব্য (0)


দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি