সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ১.৪২ মিনিটের একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায় ছোট ছোট বাচ্চাদের অস্ত্র চালানোর কৌশল শেখানো হচ্ছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, গোপনে বাচ্চাদের অস্ত্র চালানোর ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে ভারতীয় মাদ্রাসাগুলোতে। এই দাবিসহ ভিডিওটি সামনে আসলে এর সত্যতা যাচাই এবং বিস্তারিত জানতে চেক ফ্যাক্ট টিম অনুসন্ধানে নামে। চলুন দেখে নেয়া যাক অনুসন্ধানে কি পেলাম আমরা।
ভাইরাল তথ্যঃ
প্রীতিলতা প্রীতি নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত এপ্রিল ২৪, ২০২২ তারিখে ভিডিওটি পোস্ট করে শিরোনামে লিখা হয় গোপনে অস্ত্রশিক্ষা দেয়া হচ্ছে ভারতের মাদ্রাসাগুলোতে!!!!
এছাড়া অন্য আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি এপ্রিল ১৮, ২০২২ তারিখে শেয়ার করে লিখা হয়েছে- Students getting higher education in Madrasa… অর্থাৎ মাদ্রাসায় উচ্চশিক্ষা পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা…
ফেসবুকের এই পোস্টটি ২৭০০ বার শেয়ার করা হয়েছে এবং দেখা হয়েছে প্রায় ৩৪০০০ বার।
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধান
চেক ফ্যাক্ট পুরো ঘটনাটি তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছে। অনুসন্ধানের শুরুতেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি থেকে বেশ কয়েকটি স্ক্রিনশট নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ দেয়া হলে ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর তারিখে 'আইএসআইএল অ্যান্ড দ্য তালিবান' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
ওই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত একটি ছবির সাথে আলোচ্য ভাইরাল ভিডিওটির একটি দৃশ্যের অবিকল মিল দেখতে পাওয়া যায়। সেই ছবিটির নিচে লিখা রয়েছে- Children as young as five are receiving weapons and jihad training from the ISIL group অর্থাৎ পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা আইএসআইএল গ্রুপ থেকে অস্ত্র এবং জিহাদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
তাছাড়া প্রতিবেদনটিতে ৪৭.৪৪ মিনিটের একটি তথ্যচিত্রও যুক্ত থাকতে দেখা যায় এবং এই ভিডিওটির ৪৫.৪৬ মিনিটে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওটির ক্লিপ দেখা যায়।
পুরো প্রতিবেদনটি পড়লে দেখা যায় তথ্যচিত্রটি মূলত আফগানিস্তানের এবং নির্মাতা হিসেবে নাজিবুল্লাহ কুরেশি এবং জ্যামি ডরানের নাম উল্লেখ আছে। তাছাড়া প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ আছে যে, We gain unprecedented access to ISIL’s central leadership and meet children as young as five years old being trained to fight and dedicate their lives to the ‘caliphate’. অর্থাৎ ‘আমরা (নির্মাতারা) আইএসআইএল-এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছাকাছি যেতে পেরেছি এবং দেখেছি যে, পাঁচ বছর বয়সি শিশুদেরও অস্ত্রশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এবং খিলাফতের প্রতি নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে শেখানো হচ্ছে।’
তাছাড়া রিভার্স ইমেজ সার্চে একটি ইউটিউব লিঙ্কও সামনে আসে। লিঙ্কটিতে প্রবেশ করলে দেখা যায়, প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যচিত্রটি আল জাজিরার ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেলে নভেম্বর ১, ২০১৫ তারিখে ISIL and the Taliban | Featured Documentary শিরোনামে আপলোড করা হয়েছিল। তাছাড়া ভিডিওর বর্ণণায় উল্লেখ করা আছে যে, তথ্যচিত্রটি আফগানিস্তানের এবং খিলাফতের প্রতি নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে সেখানে শিশুদের অস্ত্রশিক্ষা দিচ্ছে আইএসআইএল।
সুতরাং উপরোক্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, ভারতের মাদ্রাসাগুলোতে শিশুদের অস্ত্রশিক্ষা দেয়া হচ্ছে দাবিতে যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তা সত্য নয়। মূলত আফগানিস্তানে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি ছোট বাচ্চাদের কিভাবে অস্ত্র এবং গ্রেনেড ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেয় তার উপর তৈরি আল জাজিরার তথ্যচিত্রের একটি খন্ডিত অংশকে মিথ্যা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
তাই আগে সত্য জানুন তারপর প্রচার করুন।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি