সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সবুজাভ ক্ষুদে ড্রাগন আকৃতির একটি প্রাণীর ছবি ব্যাপকভাবে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ছবিটি ফিলিপাইনের ড্রাগনের। পোস্টটি সামনে আসার পর সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান চালায় টিম চেক ফ্যাক্ট। চলুন দেখে নেয়া যাক অনুসন্ধানে কি পাওয়া গেল।
ভাইরাল তথ্যঃ
এপ্রিল ১০, ২০২২ তারিখে Emtiaz Ahamed Rasel নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে বলা হয়,
ড্রাগনের অস্তিত্ব আছে
এটি একটি ফিলিপাইনের ড্রাগন
এ রকম ভাইরাল আরও পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের প্রথম ধাপে দেখা যায়, ফেসবুকে ছবিটি প্রকাশের পর অনেকেই পোস্টের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন ড্রাগন নামক কোনো প্রাণী কখনো ছিল না। ছবিতে দেখতে পাওয়া প্রাণীটি ড্রাগন নয়, বরং এক ধরনের সরীসৃপ, যাকে Gliding lizard বলে।
এছাড়া ফেসবুক পেজ Science Bee তে এ বিষয়ক একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে বলা হয়েছে
ছবির এই প্রাণীটিকে অনেক ফেসবুক গ্রুপে ড্রাগন বলা হলেও আদতে এটি কোনো ড্রাগন নয়। ড্রাগন হল এমন এক ধরনের কাল্পনিক জীব যা মুখ দিয়ে আগুন বের করতে পারে। ড্রাগনের অস্তিত্ব কেবল চীন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া , ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশের উপকথাগুলোতেই পাওয়া যায় বাস্তবে এই ধরনের কোনো প্রাণী এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ছবির এই প্রাণীটি মূলত Draco গণের একটি টিকটিকি।এদেরকে বাংলায় উরুক্কু টিকটিকি বলে। এই টিকাটিকি দেখতে পৌরাণিক ড্রাগনদের মতো হওয়ায় অনেকেই একে ড্রাগন ভেবে ভূল করা থাকে আর এর প্রতিফলনতো ইতিমধ্যে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতেই পাচ্ছি। তবে মজার বিষয় হচ্ছে পৌরাণিক ড্রাগনগুলির সাথে সাদৃশ্য থাকার কারনেই কিন্ত এই গণের নাম ড্রাকো (Draco) রাখা হয়েছে। Draco হল সর্প বা ড্রাগনের ল্যাটিন শব্দ।
এখন পর্যন্ত Draco গণের ৪০ টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ছবির টিকটিকিটা Draco quinquefasciatus প্রজাতির। নিম্নে এই প্রাণীটির পুরো শ্রেণিবিন্যাস তুলে ধরা হলোঃ-
Kingdom: Animalia
Phylum: Chordata
Class: Reptilia
Order: Squamata
Family: Agamidae
Genus: Draco
species: quinquefasciatus
এই টিকটিকিরা মূলত বন-জঙ্গল, আর্কা বাগান, সেগুন বাগান এবং বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে বসবাস করে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ট্রপিকেল রেইন ফরেস্টগুলোতে এদের বেশি পাওয়া যায়। লেজসহ প্রায় ২০-২১ সেন্টিমিটার উচ্চতার এই টিকটিকিদের ঝিল্লিসদৃশ একপ্রকার ডানা থাকে যাকে প্যাটাজিয়াম (বহুবচনে প্যাটাজিয়া) বলে । উড়ার সময় এই ডানা পরিলক্ষিত হয়। যদিও এরা পুরোপুরি উড়তে সক্ষম না, তবে এরা প্রায়শই তাদের এই ডানা ব্যবহার করে উঁচু স্থান বা গাছ থেকে ঝাঁপ দিয়ে ভেসে থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত এদের ৬০ মিটার (২০০ ফুট) গ্লাইডিং বা ভেসে থাকার রেকর্ড করা হয়েছে।
পরবর্তীতে Science Bee গ্রুপের পোস্টটির সত্যতা যাচাইয়ে গুগলে Draco quinquefasciatus সম্পর্কে সার্চ করা হলে উইকিপিডিয়ায় Draco quinquefasciatus সম্পর্কে একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে ভাইরাল পোস্টে দাবিকৃত ড্রাগনের ছবির সাথে Draco quinquefasciatus এর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া সরীসৃপ প্রাণীদের সম্পর্কিত ওয়েবসাইট Reptile এ Draco quinquefasciatus সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানেও ভাইরাল ছবির এই প্রানীটিকে Draco quinquefasciatus বলে চিহ্নিত করা হয়।
উল্লেখ্য,গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়েই ফেসবুকে বিভিন্ন অদ্ভুত প্রাণীর ছবি দিয়ে একে ‘ড্রাগন’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে
এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদ যাচাই সংস্থা হোক্স অর ফ্যাক্ট ডট কম তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড্রাগনের বাচ্চা দাবি করে ছড়িয়ে দেয়া ছবিগুলো ফটোশপে এডিট করা।
মূলত মুখ দিয়ে আগুন উদগিরণের ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রাগন নামক উড়ন্ত সরীসৃপের বর্ণনা বিভিন্ন দেশের রূপকথাতে পাওয়া গেলেও বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে একাধিক সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপের ছবি ড্রাগন দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তেমনি Draco quinquefasciatus প্রজাতির টিকটিকির ছবিটি ফিলিপাইনের ড্রাগন অভিহিত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হলে তা ছড়িয়ে পড়ে। তাই ভাইরাল ছবিটি ফিলিপাইনের ড্রাগনের দাবিটি মিথ্যা বলে বিবেচিত করেছে টিম চেক ফ্যাক্ট।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি