সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে বোরকা পরিহিতা এক নারী একটি সুপার শপে সাজানো হিন্দু দেবতা গনেশের কিছু মূর্তি একের পর এক মাটিতে ফেলে ভাঙছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ভারতের কেরেলার একটি সুপার শপে এক মুসলিম নারী এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এমন দাবিতে বেশ কিছু পোস্ট সামনে আসার পর ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালায় টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
গত জুলাই ২৪, ২০২২ তারিখে Prity Roy নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়,
ভারতের কেরেলার একটি শপিং মলে গনেশ মূর্তি ভাঙছে একজন মুসলিম মহিলা!!
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এরাই নষ্ট করে...
একই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের শুরুতেই ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে গুগলে কী-ওয়ার্ড সার্চ করা হলে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য উইক এ আগস্ট ১৭, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। দ্য উইক এ প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো, Bahrain: Woman summoned by police after video shows her damaging Hindu idol অর্থাৎ বাহরাইন: ভিডিওতে হিন্দু মূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পর পুলিশ তাকে তলব করেছে । প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশে এটি বাহরাইনের রাজধানী মানামার একটি সুপার শপের ঘটনা বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া উক্ত সংবাদে যুক্ত ছবির সাথে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্যের হুবুহু মিল রয়েছে।
তাছাড়া দ্য উইক এর সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাহরাইন পুলিশ সেই মহিলার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাহরাইনে অবস্থিত ইন্ডিয়ান দূতাবাসের ভেরিফাইড টুইটার পেজ থেকে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিয়ে একটি টুইটও করা হয়।
পরবর্তীতে এই টুইটের সূত্র ধরে কী-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাহরাইনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ আল খলিফা এর ভেরিফাইড টুইটার একাউন্ট থেকে এবিষয়ে করা অন্য আরেকটি টুইটের লিংক পাওয়া যায়। টুইটটিতে উল্লেখ আছে,
Cracking religious symbols is not the nature of the people of Bahrain. It is an intrusive and unacceptable hate crime. Here, all religions, sects and peoples coexisted and coexisted. And whoever did it is a stranger, not one of us
অর্থাৎ ধর্মীয় প্রতীকে ফাটল ধরানো বাহরাইনের মানুষের স্বভাব নয়। এটি একটি অগ্রহণযোগ্য ঘৃণামূলক অপরাধ। এখানে সকল ধর্ম, সম্প্রদায় ও জনগণ সহাবস্থান করেছে। আর যে এটা করেছে সে আমাদের কেউ নয়।
তাছাড়া কী-ওয়ার্ড সার্চে বাহরাইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেরিফাইড টুইটার একাউন্ট থেকেও আগস্ট ১৬, ২০২০ তারিখে এবিষয়ে করা একটি টুইট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ আছে,
Capital Police took legal steps against a woman, 54, for damaging a shop in Juffair and defaming a sect and its rituals, in order to refer her to the Public Prosecution
অর্থাৎ জুফায়ারের একটি দোকানে ভাঙচুর এবং একটি সম্প্রদায়কে অবমাননার জন্য ক্যাপিটাল পুলিশ এক ৫৪ বছর বয়সী নারীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।
সুতরাং উপরোক্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি ভারতের কোন ঘটনা নয়। মূলত বাহরাইনের রাজধানী মানামার একটি সুপার শপে এক মুসলিম নারী কর্তৃক হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবতা গনেশের কিছু মূর্তি ভাঙার পুরোনো ভিডিওকে ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনা বলে মিথ্যা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি