বুকে ব্যথা মানেই কী হার্টের সমস্যা?
বুকে ব্যথা হলেই আমরা সাধারণত ধারণা করি ব্যথাটা হৃদপিন্ড থেকে আসছে এবং আতংকিত হয়ে পড়ি।আমরা ধরে নেই হার্টের কোন সমস্যা। তবে বুকে ব্যথা মানেই যে হার্টের সমস্যা এমনটা কিন্তু মনে করার কোনও কারণ নেই।এজন্য টিম চেক ফ্যাক্ট চেষ্টা করেছে এ বিষয়ে আপনাদের কিছুটা জানানোর। আসুন জেনে নেই বুকে ব্যথা সম্পর্কে বিস্তারিত।
বুকে ব্যথা কেন হয়ঃ
অতিরিক্ত ভয় পেলে
প্রচণ্ড ভয় পাওয়ার পর বুকের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার কারণটা নিঃসন্দেহে মানসিক। চিকিৎসকদের মতে, একজন রোগী প্রচণ্ড বুকে ব্যথা নিয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তাঁর বুকে ব্যথার পেছনের হৃদযন্ত্রের কোন ভূমিকা নেই।
ভার্টিগো প্রবণতা থাকলে
মানসিক কারণ থেকে হওয়া বুক ব্যথার উপসর্গগুলো ভয় পাওয়ার উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায়। যেমন - বুক ব্যথার সঙ্গে রোগীর প্রচণ্ড ঘাম হবে, শরীরে কাঁপুনি দেখা দেবে, দম আটকে যাওয়ার জোগার হবে। আর দেখা দিতে পারে পেটের গোলমাল, বমিভাব, শারীরিক ভারসাম্য হারানো ইত্যাদি।
মানসিক কারণের ব্যথা বুকেই অনুভূত হয়
ভয় বা মানসিক চাপ থেকে হওয়া ব্যথা বুকে শুরু হয় এবং তা যতক্ষণ স্থায়ী হয় ততক্ষণ একই স্থানে অনুভূত হয়। তবে হৃদরোগজনিত ব্যথা শুরু হয় বুকে এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন- চোয়াল, কাঁধ, হাত ইত্যাদি।
বুকের অনান্য জায়গায় ব্যথা
হৃদযন্ত্র থাকে শরীরের বাম পাশে। তাই হৃদরোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দেওয়া ব্যথা বাম পাশেই অনুভূত হয়। কালেভদ্রে বুকের মাঝখানেও ব্যথা হতে পারে। তবে বুকের অন্য যে কোনো অংশে ব্যথা হলে তার নেপথ্যের কারণটা মানসিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
গ্যাস্ট্রিক থেকে বুকে ব্যথা
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায়ও বুকে ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝ বরাবর নিচের দিকে অনুভূত হয়। রোগের তীব্রতায় অনেক সময় তা পুরো বুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভাজাপোড়া খেলে, খালি পেটে থাকলে এ ধরনের ব্যথা আরো বেড়ে যায়। রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ খেলে এ জাতীয় বুক ব্যথা কমে যায়। হার্টের ব্যথা কখনো এসব ওষুধে ভাল হয় না।
শ্বাসনালীর সমস্যায় বুকে ব্যথা
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে শ্বাসনালীর স্পাজম হতে পারে। এ রোগে বুকে চাপ চাপ লাগে এবং বিশ্রাম নিলে কমে যায়। হার্টে রক্ত স্বল্পতাজনিত ব্যথার সঙ্গে এ ব্যথার অনেক মিল আছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যথার পাশাপাশি কাশি, বুকে চি চি আওয়াজ হতে পারে। ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা যেমন নিঊমোনিয়া,ফুসফুসে পানি ঢোকা, ফুসফুসের যক্ষ্মা ও ক্যান্সার ইত্যাদি রোগেও বুকে ব্যথা হতে পারে।
হৃদরোগজনিত বুকে ব্যথার ধরণ:
সাধারণত বুকের মাঝখানে তীব্র ও অধিক্ষণ প্রচণ্ড ব্যথা,অস্থিরতা,শ্বাসকষ্ট,ঘাম,ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া,বমি বমি ভাব,ডায়েরিয়া,সর্বোপরি একটা মৃত্যুভয় তৈরি হয়। অনেক সময় বিশ্রাম নিলেও এ ধরনের ব্যথা কমে না। তখন আমরা একে বলি `মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন`। তবে ৩০% ক্ষেত্রে মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন-এর রোগীদের বিশেষ করে বয়স্ক ও ডায়াবেটিকস রোগীদের বুকে ব্যথা অনুভুত হয়না। হৃদরোগজনিত বুকের ব্যথা সাধারণত হাত, ঘাড়, চোয়াল এ ছড়িয়ে পড়ে। উপরের দিকে উঠতে গেলে,ভারী জিনিসপত্র বহন,খাবার পর ভারী ব্যয়াম করলে সাধারণত এ ধরনের ব্যথার উদ্ভব হয়।
বুকে ব্যাথা হলে করণীয়ঃ
ম্যাক্স হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ জহিরউদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াছ জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে এক প্রতিবেদনে বলেন , হঠাৎ বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা শুরু হলে কিংবা এই ব্যথা শরীরের কোনোদিকে ছড়িয়ে পড়লে এবং সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও ঘামতে শুরু করলে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে।
হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে রোগী যে কাজই করুক না কেন তা বাদ দিয়ে বসে পড়তে হবে এবং সম্ভব হলে শুয়ে পড়তে হবে। সম্ভব হলে একটি ‘এসপিরিন ৩০০ গ্রাম’ বড়ি সেবন করতে হবে। সঙ্গে অ্যাসিডিটির ওষুধও খাওয়া যেতে পারে।
হৃদরোগ চিকিৎসায় একটি বহুল ব্যবহৃত বাক্য আছে,তা হলো টাইম ইজ মাসেল। অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর বা ব্যথা শুরু হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাওয়া যাবে তত হার্টের মাংসপেশির নেক্রোসিস বা ক্ষয় হওয়া রোধ করা যাবে। বলা হয় ৬-১২ ঘণ্টার মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে হয় ।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি