বহুল ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে দাবি করা হয়েছে ডিওডোরান্ট বা অ্যান্টিপারস্পির্যান্টের ব্যবহারে স্তন ক্যান্সার হতে পারে। এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট সামনে আসার পরে এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট। আসুন দেখি কি তথ্য উপাত্ত পেলাম আমরা।
ভাইরাল তথ্যঃ
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২ তারিখে ক্যান্সার সচেতনতা কেন্দ্র নামক গ্রুপে Sadin Bangla লেখেন, “ডিওডোরান্ট বা অ্যান্টিপারস্পির্যান্টের ব্যবহারে হতে পারে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার।”
আমরা কী ওয়ার্ড সার্চ করে দেখতে পাই উক্ত বিষয় নিয়ে কিছু অনলাইন পোর্টালও খবর প্রকাশ করেছে।
Online-dhaka.com নামক একটি পোর্টালে এই সংক্রান্ত একটি লেখার শিরোনাম ছিলো, “ডিওডোরেন্ট ও বক্ষবন্ধনী যেভাবে স্তন ক্যানসারের ঝুকি বাড়ায়”
Readablecard.com নামক আরেকটি ওয়েব পোর্টালে এরকমই একটি খবরের শিরোনাম ছিলো, “Deodorant থেকে ক্যান্সার হয়”
Health-consultation.com নামক পোর্টালের শিরোনাম ছিলো, “ডিওডোরেন্ট এবং স্তন ক্যান্সারের মধ্যে ভীতিজনক লিঙ্ক”
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
ডিওডোরান্ট বা অ্যান্টিপারস্পির্যান্টের ব্যবহারে স্তন ক্যান্সার হতে পারে কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে টিম চেক ফ্যাক্ট সাহায্য নেয় গুগল সার্চ ইঞ্জিনের।
ডিওডোরান্ট থেকে কি স্তন ক্যান্সার হতে পারে?
উপরিউক্ত খবরগুলোর বিস্তারিত অংশে দেখা যায় এই বিষয় নিয়ে অন্যতম চিন্তার কারণ হিসেবে মনে করা হয় ডিওডোরান্টের রাসায়নিক বস্তুগুলি শরীর শুষে নেয় এবং সেগুলি বগলের নিচে লিম্ফ নোডে জমা হয়।
এক্ষেত্রে কী ওয়ার্ড সার্চে Cancer.org অর্থাৎ American Cancer Society এর ওয়েব লিঙ্কে এই সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমরা পাই।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির বক্তব্য অনুযায়ী এই অনুমান অসত্য। তারা বলছেন,
‘চিকিৎসাশাস্ত্রের এপিডেমিওলজিতে এমন কোন বিষয় নেই যার থেকে ধারণা করা যায়অ্যান্টিপারস্পির্যান্টের ব্যবহারের সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের যোগ আছে, এই তথ্যের সমর্থনে খুব অল্পই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি ২০০২ তে ৮১৩ জন যাদের স্তন ক্যানসার আছে এবং ৭৯৩ জন যাদের স্তন ক্যানসার নেই তাদের নিয়ে একটি এপিডেমিওলজি গবেষণা চালানো হয়। গবেষকরা স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে অ্যান্টিপারস্পির্যান্টের ব্যবহার, ডিওডোরান্টের ব্যবহার বা বগল কামিয়ে ফেলার মধ্যে কোন যোগসূত্র খুঁজে পাননি।’
ডিওডোরান্টে থাকা অ্যালুমিনিয়াম ও প্যারাবেন কি নিরাপদ?
অ্যালুমিনিয়াম
ডিওডোরান্ট, অ্যান্টিপারস্পির্যান্ট বা অন্যান্য আন্ডার আর্মের জন্য ব্যবহৃত বস্তুর মধ্যে সক্রিয় উপাদান হল অ্যালুমিনিয়াম। অ্যালুমিনিয়াম সোয়েট গ্ল্যান্ড বা ঘর্মগ্রন্থির কাজ ব্যাহত করে ঘাম হওয়া বন্ধ করে দেয়। গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে অ্যালুমিনিয়ামের থেকে স্তন ক্যান্সার হওয়ার কোন সঠিক প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই স্তন ক্যান্সারে অ্যালুমিনিয়ামের যোগ নিয়ে চিকিৎসা গবেষণায় সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।
প্যারাবেন
মূলত প্রিসার্ভেটিভ বা সংরক্ষক হিসেবে প্যারাবেন ব্যবহার হয়। টিম চেক ফ্যাক্ট এর অনুসন্ধানে হাতে আসে International Journal of Toxicology থেকে প্রকাশিত প্যারাবেন নিয়ে একটি গবেষণাপত্র। যা পড়ে দেখা গেছে প্যারাবেন ইস্ট্রোজেন হরমোনের মতোই কাজ করে। যেহেতু, ইস্ট্রোজেন ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি ঘটায়, সেক্ষেত্রে প্যারাবেন থেকেও চিন্তার কারণ রয়েছে। যদিও গবেষকরা এটা প্রমাণ করতে পারেননি যে প্যারাবেন স্তন ক্যান্সারের কারণ।
উল্লেখ্য, সব ডিওডোর্যান্ট বা অ্যান্টিপারস্পির্যান্ট অ্যালুমিনিয়াম বা প্যারাবেন নেই।
ঘাম বন্ধ করা কি ক্যান্সারের অন্যতম কারণ?
ঘাম শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে - এটি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। লিভার ও কিডনির কাজের মাধ্যমেই শরীর থেকে টক্সিন বের হয়। American Cancer Society (Cancer.org) এর উপরিউক্ত লিঙ্কে জানানো হয়েছে,
‘শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক বস্তু দূর করতে লিম্ফ নোড সাহায্য করে। কিন্তু লিম্ফ নোড ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ পদার্থ বা টক্সিন বের করতে পারে না। এমনকি ঘর্ম গ্রন্থির সঙ্গে লিম্ফ নোডের কোন যোগ নেই। ঘর্মগ্রন্থি লিম্ফ নোডে থাকে না, ত্বকে থাকে। শরীরের রক্তে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকারক জিনিসগুলি কিডনি ও লিভারের মাধ্যমেই বের হয়। কিডনি থেকে বের হওয়া বস্তুগুলি প্রস্রাবের মাধ্যমে বাইরে বের হয়, লিভার থেকে বাইল বা পিত্তর মাধ্যমে তা বের হয়। পিত্ত ওই বস্তুগুলির সঙ্গে মিশে তা মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়।’
সকল তথ্যাদি বিশ্লেষণে টিম চেক ফ্যাক্ট নিশ্চিত হয়েছে যে, ডিওডোরান্ট বা অ্যান্টিপারস্পির্যান্টের ব্যবহারে স্তন ক্যান্সার হতে পারে এই বিষয়টির কোন সত্যতা নেই। তবে কিছু ক্ষতিকারক পদার্থ তার মধ্যে উপস্থিত আছে, কিন্তু এগুলোর দ্বারা যে ক্যান্সার হয়, এমন কোন বিষয় নিশ্চিতভাবে কোন বিজ্ঞানী জানাতে পারেন নি।
তাই টিম চেক ফ্যাক্ট ভাইরাল হওয়া দাবিটিকে অসত্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি