সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোড়া ঘরবাড়ির কিছু ছবি ব্যবহার করে অনেক ভারতীয় ফেসবুক ব্যবহারকারীরা দাবি করছেন যে, এগুলো ফরিদপুরের বোয়ালখালীতে হিন্দু ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচারের ঘটনা। ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো সামনে আসলে সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
#SaveBangladeshiHindhu
#savebangladeshihindustemple
গত ৪ আগষ্ট, ২০২২ তারিখে ‘সনাতন একতা মঞ্চ’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে কিছু পোড়া বাড়িঘরের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়,
বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়ন
৩ নং ওর্য়াড কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে গতপরশু রাত ৩ টায় ৫টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।💔😓
দোকান মালিক, রনি দে, দোলন, পরিমল দেব নাথ💙💙
দোকানে ৩টি ছাগল ফ্রিজ সহ
দোকানের সকল মালামাল পুড়ে যায়।🙂💔
কারা করেছে 🙄
কি লাভ সে সব জেনে হ্যাশট্যাগে
একই দাবিতে ফেসবুকে এরকম আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের প্রথম ধাপে টিম চেক ফ্যাক্ট ভাইরাল পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবিগুলোর রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে বাংলাদেশের বেশ কিছু নিউজ পোর্টালে সম্প্রতি বোয়ালখালীতে ঘটা অগ্নি দুর্ঘটনার কিছু খবর খুঁজে পায় । গত ২ আগষ্ট, ২০২২ তারিখে অনলাইন পোর্টাল Jagonews24 এ ‘বোয়ালখালীতে আগুনে ৫ দোকান পুড়ে ছাই’ শিরোনামে একটি সংবাদ আমাদের সামনে আসে। এই প্রতিবেদনে ভাইরাল ছবিটির একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়,
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন আগুন লাগার খবর দিলে বোয়ালখালী ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুনে রণি রায়ের মুদি দোকান, মো. করিমের কুলিং কর্ণার, পরিমল নাথের সবজির দোকান, দোলন শীলের সেলুন ও মো. মহরমের সবজির দোকান পুড়ে গেছে। এছাড়া মুদির দোকানে রাখা রনির তিনটি ছাগল পুড়ে মারা গেছে। আগুনে দোকানে রাখা একটি মোটর সাইকেলও পুড়ে গেছে। এতে পাঁচ লাখেরও বেশি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর মাধ্যমে জানা যায় শুধু হিন্দুদের নয়, বোয়াখালীর এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মুসলিম মানুষের দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়া চট্টগ্রাম নিউজের এক প্রতিবেদনেও বল হয় যে, ফরিদপুরের বোয়ালখালীর অগ্নি দুর্ঘটনাটি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সংগঠিত হয় । বোয়ালখালীর ফায়ার সার্ভিসের লিডার মো হায়দার হোসেন তা নিশ্চিত করেন। অর্থাৎ অগ্নিকান্ডের মাধ্যমে সেখানে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের মানুষই এর শিকার হয়েছেন।
এছাড়া বোয়ালখালীর অগ্নি দুর্ঘটনা সম্পর্কে আরো কিছু প্রতিবেদন পড়ুন এখানে এবং এখানে
উপরোক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যে, বোয়ালখালীর অগ্নি দুর্ঘটনাটি বৈদ্যতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে, পরিকল্পিত বা সাম্প্রদায়িক হিংসার নয়। এছাড়া এই দুর্ঘটনায় হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে অগিকান্ডের ঘটনাটি হিন্দু ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচারের দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর দাবিটি মিথ্যা। তাই সত্য জানুন, তারপর প্রচার করুন।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি