সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘হায়াম’ নামে উটের বিশেষ একটি রোগের কথা উল্লেখ করে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে, এই বিশেষ রোগ হলে উট একদম খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শুধু সুর্যের দিকেই তাকিয়ে থাকে। পরবর্তীতে রোগাক্রান্ত উটকে জীবিত সাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসা করানো হয়। তাছাড়া পোস্টটিতে আরও উল্লেখ আছে যে, সাপ গিলে ফেলার পর উটের ধীরে ধীরে তৃষ্ণার অনুভূতি হয় এবং ৮ ঘন্টা এ অবস্থায় থাকার পর সাপের বিষের যন্ত্রনায় উটের চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে থাকে। এক পর্যায়ে প্রচন্ড তৃষ্ণার কারণে উট একদমে প্রচুর পানি পান করে। আর এভাবে উট পুনরায় খাওয়া-দাওয়া শুরু করে অর্থাৎ আরোগ্য লাভ করে। তাছাড়া এসময় উটের চোখ দিয়ে পড়তে থাকা পানি থেকে যে কোন প্রাণীর বিষকে নষ্ট করার জন্য ঔষধ তৈরি করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এমন দাবিতে অসংখ্য পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
গত আগস্ট ৩, ২০২২ তারিখে Sunnah Tune নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি উটকে সাপ খাওয়ানোর ছবি যুক্ত করে এবিষয়ে বিস্তারিত পোস্ট দেয়া হয়।
ফেসবুকে এরকম আরও পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের শুরুতেই উটের যাবতীয় রোগ সম্পর্কে জানতে গুগলে কী-ওয়ার্ড সার্চ করা হলে বিজ্ঞানী এবং রিসার্চারদের গবেষণাপত্র শেয়ারিং ও বিভিন্ন আলোচনার জন্য ব্যবহৃত ‘রিসার্চগেট’ নামে একটি ইউরোপীয় বাণিজ্যিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট সামনে আসে। সেখানে জীবদ্দশায় একটি উটের সকল রোগ ও নিরাময় নিয়ে বিস্তরভাবে লিখিত একটি গবেষণাপত্র পাওয়া যায়। পুরো গবেষণাপত্রটি পড়ে উটের এমন কোন রোগের নাম পাওয়া যায়নি যার জন্য উটকে জীবিত সাপ খাওয়াতে হয়।
তাছাড়া যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পানি সরবরাহ কোম্পানি Severn Trent এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে যে, একটি উট ১৫ দিন পর্যন্ত পানি না খেয়ে বাঁচতে পারে। এমনকি দীর্ঘদিন না খেয়ে তারা তাদের ওজন ৪০ শতাংশ হ্রাস করেও বেঁচে থাকে। তাছাড়া একবারে তারা ৩২ গ্যালন বা ১৪৫ লিটার জল পান করতে পারে। আর এই জল তাদের ১৫ দিনের জন্য যথেষ্ট। ফলে অনেকসময় দেখা যায় যে, এই ১৫ দিন সময়ের মধ্যে উট জল পান করছে না। ফলে উট খামারি বা মালিক মনে করতে পারেন সেই উটের কোন অসুখ হয়েছে। তখন অনেকে কথিত চিকিৎসা অনুযায়ী উটকে জোর করে সাপ খাওয়ানোর মত ঘটনা ঘটায়।
তাছাড়া ভাইরাল পোস্টে আরও বলা হয়েছে যে, উটের চোখের জল দিয়ে যে কোন প্রাণীর বিষকে নষ্ট করার জন্য ঔষধ তৈরি করা হয়। তবে সার্চ করে দেখা গেছে উটের চোখের জল বা অ্যাকুয়াস হিউমারের তেমন কোনো বিশেষ উপকার নেই। তা অন্য প্রানীর চোখের জলের মতোই স্বাভাবিক। তাছাড়া এবিষয়ে সার্চ করে কোনো রিসার্চ পেপার বা কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
সুতরাং উপরোক্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘হায়াম’ নামে উটের বিশেষ একটি রোগের কথা উল্লেখ করে রোগাক্রান্ত উটকে জীবিত সাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসা করানো হয় দাবিতে যে পোস্ট ভাইরাল হয়েছে তা সত্য নয়।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি