সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুইজন আহত পুলিশের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ২ পুলিশকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালো তরুণী। পোস্টগুলোতে একই শিরোনামে একটি অনলাইন পোর্টালের লিংকও সংযুক্ত করা হয়েছে। ফেসবুকে পোস্টটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়লে সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
২০আগষ্ট, ২০২২ তারিখে অভিশপ্ত জীবনের গল্পো নামের একটি ফেসবুকে আইডি থেকে একটি অনলাইন পোর্টালের লিংক শেয়ার করা হয় যেখানে পোস্টের ক্যাপশন ও পোর্টাল লিংকের শিরোনাম ছিলো,
ধ;র্ষ;ণ থেকে বাঁচতে ২ পু'লিশকে পি'টিয়ে হাসপাতালে পাটাল তরুনি(বিস্তারিত দেখুন)
একই দাবিতে ফেসবুকে এরকম আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের প্রথম ধাপে টিম চেক ফ্যাক্ট ভাইরাল অনলাইন পোর্টালটির লিংকটি ওপেন করলে দেখতে পায় প্রতিবেদনের ভেতরে বিস্তারিত কিছুই লেখা হয় নি। শুধু আহত পুলিশদের ছবিসহ শিরোনামটি আরেকবার প্রকাশ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে সম্প্রতি ধর্ষণ থেকে বাঁচতে তরুণী কর্তৃক পুলিশ পিটানোর কোন ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে কী-ওয়ার্ড সার্চ করা হলে এমন কোন সংবাদ কোন গণমাধ্যমে খুঁজে পায়নি টিম চেক ফ্যাক্ট। অতঃপর ভাইরাল পোস্টে ব্যবহৃত আহত পুলিশদ্বয়ের ছবিটি সংগ্রহ করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠের অনইলাইন ভার্সনের একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পায় টিম চেক ফ্যাক্ট। ১৩ জুন, ২০২২ তারিখে বিএনপি কর্মীদের হামলায় ৫ পুলিশ আহত, দুজনের অবস্থা গুরুতর শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়,
বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমতলী উপজেলা বিএনপির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। পরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সভা শেষে বিএনপি নেতাকর্মীরা আমতলী-পটুয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে এসআই দাদন মিয়া (৪৩), এসআই শহীদুল আলম হাওলাদার (৪৮), এএসআই কামাল উদ্দিন মিয়া (৩৮), এএসআই সোহরাব (৩৪) ও পুলিশের সদস্য কবির খান (৪০) আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় দাদন মিয়া ও শহীদুল আলম হাওলাদারকে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রতিবেদনের ছবির সাথে সম্পূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ ভাইরাল ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে টিম চেক ফ্যাক্ট দেখতে পায় যে, আহত দুজন পুলিশের একজনার নেমপ্লেটে তার নাম শহীদুল দেখা যায়, যা প্রতিবেদনের তথ্যের সাথে মিলে যায়। অপরজনার নেমপ্লেটে নাম না থাকলেও প্রতিবেদনের তথ্যনুযায়ী তার নাম দাদন মিয়া বলে টিম চেক ফ্যাক্ট ধরে নেয়।
অতঃপর টিম চেক ফ্যাক্ট আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কাসেম মোঃ মিজানুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ছবিটি গত ১৩ জুন বিএনপির হামলায় আহত এস আই দাদন মিয়া ও এস আই শহীদুল ইসলাম হাওলাদার এর হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোলা।
১৩ জুন, ২০২২ তারিখে বিএনপি কর্মীদের হামলায় পুলিশ সদস্যদের আহতের সংবাদ পড়ুন এখানে, এখানে
উপরোক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ফেসবুকে ভাইরাল ছবিটি মূলত গত ১৩ জুন আমতলী উপজেলায় বিএনপি কর্মীদের হামলায় পুলিশ সদস্যদের আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সময়ের। সম্প্রতি একটি ভুয়ো অনলাইন পোর্টালে ছবিটি ব্যবহার করে শুধু একটি মিথ্যা শিরোনাম দিয়ে প্রচার করা হলে মূহুর্তেই তা ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে। সুতরাং, ধর্ষণ থেকে বাঁচতে তরুণী কর্তৃক দুই পুলিশকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর দাবিটি মিথ্যা।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি