সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জঙ্গল ঘেরা একটি স্থানে চিতা বাঘ বসে থাকার একটি ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, টাঙ্গাইলের একটি বেত বাগানে চিতাবাঘের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ছবিটি মুহূর্তে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এর সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখে Satya Ghotona নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়,
প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইলে দেখা মিলেছে চিতাবাঘের এবং এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী।
একই দাবিতে ফেসবুকে এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের প্রথম ধাপে টিম চেক ফ্যাক্ট টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া বেত বাগানে চিতাবাঘ বিচরণ করার বিষয়টি নিয়ে কী-ওয়ার্ড সার্চ করলে RK Rasel নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে চিতা বাঘের রহস্য উন্মোচন! অবশেষে বন বিভাগের কর্মকর্তার সামনে সেই চিতা বাঘের রহস্য উন্মোচন হলো (ভিডিও) শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পায়। ভিডিওটিতে এক কিশোরকে বলতে শোনা যায় বেত বাগানে কোনো বাঘ নেই। সে বেত বাগানে বাঘের ছবিটি এডিটের মাধ্যমে তৈরি করেছে। এছাড়া ভিডিওটির কমেন্ট বক্সে টাঙ্গাইলের সখিপুরের ৫ নং হাতিবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ খানের সিলযুক্ত সাকিব খান নামের এক কিশোরের হাতে লেখা জবানবন্দির একটি কপি খুঁজে পায় টিম চেক ফ্যাক্ট।
সাকিব খান নামক কিশোর এর জবানবন্দি অনুযায়ী, সে বেতবাগানের একটি ছবি তোলে, পরে অনলাইন থেকে একটি চিতাবাঘের ছবি নিয়ে এডিট করে বেতবাগানের ছবিতে বাঘের ছবি বসিয়ে ফেসবুকে বেত বাগানে চিতা বাঘের আতঙ্ক শিরোনামে স্ট্যাটাস দেয়। ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে সে বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভি ও ডিবিসি নিউজে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয় বলেও জানায় জবানবন্দিতে। পাশাপাশি এই ঘটনার জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করে।
পরবর্তীতে ১৪ সেপ্টেম্বর,২০২২ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে বেতবাগানে চিতা বাঘের বিচরণের খবর মিথ্যা বলে স্বীকার কিশোরের শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় টিম চেক ফ্যাক্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়,
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার হতেয়া রেঞ্জ কার্যালয়ে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের জিজ্ঞাসাবাদে বেতবাগানে চিতা বাঘের বিচরণের খবর মিথ্যা বলে শিকার করেছে ওই কিশোর।
হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল আহাদ বলেন, উপজেলার হতেয়া বেতবাগানে চিতা বাঘের বিচরণের খবরটি মিথ্যা। ওই কিশোর বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছে। ভবিষ্যতে এমন গুজব ছড়াবে না, এই মর্মে সে মুচলেকাতে সই করেছে।
সুতরাং উপরোক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, সাকিব খান নামের এক কিশোর টাঙ্গাইলের হতেয়া রেঞ্জ কার্যালয়ের পাশে প্রাকৃতিক বেতবাগানের একটি ছবি তুলে সেখানে এডিটের মাধ্যমে চিতা বাঘের ছবি বসিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। পোস্টে বেতবাগানে চিতা বাঘের আতঙ্ক উল্লেখ করা হয়। মুহূর্তে ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টাঙ্গাইলের বেত বাগানে চিতাবাঘের উপস্থিতির দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি মিথ্যা।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি