সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনুমতি পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কোন তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এর সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
১০ মার্চ ২০২৩ S R Rakib Islam নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে বেগম খালেদা জিয়ার হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়,
বিদেশে উন্নত চিকিৎসা'র অনুমতি পেলেন
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
আলহামদুলিল্লাহ
একই দাবিতে ফেসবুকে আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের প্রথম ধাপেই খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন কিনা জানতে কী-ওয়ার্ড সার্চ করলে শর্ত শিথিল করে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন শিরোনামে ৭ মার্চ,২০২৩ তারিখে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় টিম চেক ফ্যাক্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন পরিবারের সদস্যরা। এবারের আবেদনেও তাঁর মুক্তির শর্ত শিথিল করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার গতকাল সোমবার (৬ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই আবেদন করেছেন। খালেদা জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
যদিও খালেদা জিয়ার পরিবার এবারও শর্ত শিথিল করে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে আবেদন করেছে সরকারের কাছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, শর্ত শিথিল করে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মন্ত্রণালয়ে এসেছে। এখন অল্প সময়ের মধ্যে আবেদনের ব্যাপারে আইনগত মতামত দেওয়া হবে।
পরবর্তীতে ৯ মার্চ ২০২৩ দৈনিক ইনকিলাবে দিনভর গুঞ্জন বিদেশ যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া? শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় টিম চেক ফ্যাক্ট । যেখানে বলা হয়,
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে বেশ ক’টি ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ার অনলাইন ভার্সন, বেসরকারি টিভির বাংলাওয়েবসাইট এবং নিউজ পোর্টাল একটি সংবাদ পরিবেশন করে। তাতে বলা হয়, গত ৬ মার্চ বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তারা শর্তসাপেক্ষ কারামুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনের ওপর মতামত চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশ যাত্রায় আইনগত কোনো বাধা নেই মর্মে মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকগণ—–বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার পক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি মতামত পাঠানোর বিষয়ে জানতে চান। জবাবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করা হয়েছে মর্মে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেটি সত্য নয়। এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং তার শর্তযুক্ত মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর একটি আবেদন এসেছে। আমি জানতে পেরেছি যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার (বেগম খালেদা জিয়া) ভাই শর্তযুক্ত মুক্তির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। সেটি মন্ত্রণালয়ে এসেছে। তবে আমার কাছে এখনও আসেনি। ফাইলটি দেখলে আমি জানাব।
–বেলা সোয়া ২টায় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের বিষয়ে একটি প্রেসনোট পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিমের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টিকে ‘গুজব’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তির আবেদনের বিষয়ে এখনও আইন মন্ত্রণালয় কোনো মতামত দেয়নি। এ নিয়ে গুজব বা বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানানো হলো।
পাশাপাশি ১০ মার্চ ২০২৩ আইনমন্ত্রীর বরাত দিয়ে দৈনিক যুগান্তর খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার তথ্যটিকে মিথ্যা দাবি করে একটি সংবাদ প্রকাশ করে।
সুতরাং উপরোক্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, গত ৬ মার্চ ২০২৩ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে তার পরিবারের সদস্যরা। একইসাথে তাঁর মুক্তির শর্ত শিথিল করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ারও অনুমতি চাওয়া হয়। পরবর্তীতে এই খবরটিই বিভিন্ন গণমাধ্যমে চটকদার শিরোনামে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। তাছাড়া আইনমন্ত্রী নিজেই এক বক্তব্যে এটিকে গুজব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি