গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কানাডায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এরই সূত্র ধরে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে যে, নিহত শিক্ষার্থীর একজন বাংলাদেশি সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ এর ছেলে নিবিড় কুমার। তথ্যটি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এর সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে Current news নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে কুমার বিশ্বজিৎ, তার স্ত্রী ও ছেলের একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়,
কানাডায় শিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলেসহ চার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত
কানাডায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় চার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে দেশের স্বনামধন্য শিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার। স্থানীয় সময় গত সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। টরেন্টো পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টরেন্টো নগরীর অদূরে মিসিসাগা এলাকায় ৪২৭ হাইওয়ে ও ডানডাস ইন্টারসেকশনের সন্নিকটে সোমবার রাতে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কুমার বিশ্বজিৎ পুত্র ছাড়াও আরিয়ান আলম দীপ্ত, শাহরিয়ার খান ও অ্যাঞ্জেলা
একই দাবিতে ফেসবুকে এরকম আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের প্রথম ধাপে টিম চেক ফ্যাক্ট কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ব্যাপারে কী-ওয়ার্ড সার্চ করলে ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম দৈনিক কালের কন্ঠে কানাডায় সড়কে ঝরল তিন বাংলাদেশির প্রাণ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশে বলা হয়,
কানাডার টরন্টোতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি তিন শিক্ষার্থীর প্রাণহানি ঘটেছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরেকজন। সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে আহত ওই তরুণ। স্থানীয় সময় গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন শাহরিয়ার খান, অ্যাঞ্জেলা বাড়ৈ ও আরিয়ান দীপ্ত।
কানাডার এই সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে আরো কিছু প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
এছাড়া গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশি সংগীতশিল্পী প্রিতম আহমেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পায় টিম চেক ফ্যাক্ট। পোস্টে বলা হয়,
আমাদের প্রিয় শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ দাদার ছেলে নিবিড় কানাডায় রোড এক্সিডেন্টে আহত হয়েছেন। বর্তমানে টরোন্টর সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ওর শারীরিক অবস্থা জানাতে ডাক্তাররা আরো ৬/১৮ ঘন্টা পর্যবেক্ষন করবেন। আমার সাথে আই মুহুর্তে হাসপাতালে অবস্থানরত ওর কাকুর অভিজিত দে এর সাথ কথা হয়েছে। অযথা না জেনে কেউ বিভ্রান্তীমুলক সংবাদ প্রচার করবেন না।
বাচ্চাটার জন্য দোয়া করেন।
পাশাপাশি গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি কুমার বিশ্বজিৎ এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে কানাডার সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি বলেন,
'জীবন' কখনো কখনো অনেক বড়ো পরীক্ষার অন্য এক নাম। হঠাৎ আসা কোনো ঝড়ের মতো গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি কানাডার টরন্টো শহরে আমার একমাত্র সন্তান নিবিড় এবং তার তিন বন্ধু আরিয়ান দীপ্ত , শাহরিয়ার খান মাহির ও এঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈ এক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়। আরিয়ান, মাহির ও শ্রেয়া আমাদের সবাইকে ছেড়ে অন্য দুনিয়ায় চলে গেছে।
নিবিড়ের মতোই বাকি তিনজনকে আমি আমার সন্তানই মনে করি। তারা আমার পরিবারেরই একটা অংশ। তাদের সবার সাথেই আমার সম্পর্ক ছিল বন্ধুতুল্য। আমি মেনে নিতে পারছি না তারা নেই। সন্তান হিসেবেই তাদের স্মৃতি আমার হৃদয়ে থাকবে চিরজাগ্রত।
আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের এই শোক সহ্য করবার শক্তি দেন।
আমি ঈশ্বরের কাছে আরও প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাকে ও আমার পরিবারের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আমার 'নিবিড়'-কে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন।
নিবিড় এখনো আইসিইউতে শয্যাশায়ী।
এই আকস্মিক ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত।
আমি আমার সকল বন্ধু, পরিচিতজন এবং ভক্তবৃন্দের কাছে 'নিবিড়' এর জন্য দোয়া/আশীর্বাদ কামনা করছি।
আর যারা ইতোমধ্যে নিবিড়ের সুস্থতা কামনা এবং আমার পরিবারের এ দুঃসহ অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য দোয়া/আশীর্বাদ করেছেন ও করছেন তাদের কাছে আমি চিরঋণী।
- কুমার বিশ্বজিৎ
সুতরাং উপরোক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার চার শিক্ষার্থীর মধ্যে আরিয়ান, মাহির ও শ্রেয়া নামের ৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হন এবং কুমার বিশ্বজিতের এর ছেলে নিবিড় মারাত্নকভাবে আহত হয়ে এখনো টরোন্টর সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অনেকেই নিহত শিক্ষার্থীর মধ্যে কুমার বিশ্বজিতের ছেলেও রয়েছেন ভেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন, যা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সম্পুর্ণ মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেছে টিম চেক ফ্যাক্ট। তাই আগে সত্য জানুন, তারপর প্রচার করুন।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি