সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দাবি করা হয় সংগীত শিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজের বাড়িতে র্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে টাকার গুদাম। ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
১১ মে, ২০২২ তারিখে দৈনিক দখিনের ক্রাইম নামক একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয় যার ক্যাপশনে লেখা হয়,
মমতাজের বাড়িতে অবৈধ টাকার গোদাম।
পোস্টটিতে এক লক্ষ বিরাশি হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী রিয়েক্ট প্রদান করেছেন এবং আটাত্তর হাজার লোক ভিডিওটিকে শেয়ার করেছেন।
এছাড়া Mohin Khan নামক ফেসবুক আইডি থেকেও একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।
এছাড়া ফেসবুকে এরকম আরো পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের প্রথম ধাপে টিম চেক ফ্যাক্ট গুগলে কী ওয়ার্ড সার্চ করলে সংসদ সদস্য ও শিল্পী মমতাজের বাসায় কোন ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন অভিযানের সংবাদ খুঁজে পায় নি। এছাড়া সম্পূর্ণ ভিডিওটি বারংবার পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় মমতাজ ভিলা নামক বাড়ির একটি নেমপ্লেট দেখা গেলেও কোথাও কন্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ এর সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয় নি।
বরং ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে গিয়ে দেখা যায় তৎকালীন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম সংবাদমাধ্যমকে জানাচ্ছেন,
“এনামুল হক ও তার ভাই রূপণ ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র্যাব-৩ আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ কোটি নগদ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে”।
ম্যাজিষ্ট্রেট সারওয়ার আলম এর বক্তব্য শুনে প্রতীয়মান হয় যে র্যাব-৩ এর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া নামক দুই সহোদর এর বাসায় অভিয়ান চালিয়ে প্রায় ২৬ কোটি টাকা উদ্ধারের ভিডিও এটি।
পরবর্তীতে টিম চেক ফ্যাক্ট ভাইরাল ভিডিও থেকে ছবি সংগ্রহ করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ৫ সিন্দুক ভর্তি টাকা, স্বর্ণালঙ্কার মিলেছে এনু-রুপনের বাসায় শিরোনামে যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২ তারিখে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় ভাইরাল ভিডিও টি মমতাজের বাসায় অভিযানের নয় বরং এনু-রুপন নামক ব্যক্তিদের বাসার।
পরবর্তীতে গুগলে এনু-রুপন এর বাসায় অভিযান সম্পর্কে সার্চ করলে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে অনেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
২৬ ফেব্রুয়ারি,২০২০ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে এনু-রুপনের ‘টাকার গোডাউনে’ অভিযান: সিন্দুকে ২৭ কোটি টাকা শিরোনামে একটি সংবাদ খুঁজে পায়। সংবাদে বলা হয়,
ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার আরেক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৭ কোটি (২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা) টাকা পেয়েছে র্যাব।
পাঁচটি সিন্দুকে থরে থরে সাজানো এই টাকা ছাড়াও সেখান থেকে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজপত্র, মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ও প্রায় এক কেজি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। এনু ও রুপন- এ দুই ভাই গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে র্যাব-৩ এর একটি দল সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় পুরান ঢাকার ১১৯/১ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে মমতাজ ভিলায় অভিযান শুরু করে।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা চলে শ্বাসরুদ্ধকর এ অভিযান। ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু হয়। বাড়িটির নিচতলার প্রায় পুরোটাই এই ‘টাকার গোডাউন’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেফতার এনু-রুপনের বাসায় অভিযান সম্পর্কে আরো সংবাদ পড়ুন এখানে এবং এখানে।
পাশাপাশি টিম চেক ফ্যাক্ট ক্যাসিনো কাণ্ডের এনু-রুপনের ওয়ারীর মমতাজ ভিলাকে এমপি মমতাজের বাড়ি আখ্যা দিয়ে অপপ্রচার শিরোনামে বাংলা বার্তা অনলাইন পোর্টালে ৫ মার্চ,২০২০ এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। যেখানে বলা হয়, বাংলা বার্তা সংসদ সদস্য মমতাজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,
“বিগত কিছু দিন যাবত ইউটিউব, ফেসবুকে জামাত শিবিরের একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত আছে। নানা ভাবে ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সাথে কথা হয়েছে, অতি দ্রুত এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
মূলত ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালক এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভুঁইয়া গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে লালমোহন সাহা স্ট্রীটে তাদের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ ও স্বর্নালংকার জব্দ করে র্যাব। সেই অভিযানের ভিডিও গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে ভিডিও’র শুরুতে মমতাজ ভিলা নামক বাড়ির নেমপ্লেটটি দেখানো হলে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, এবং তারা এটিকে শিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজের বাড়ি উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে। কিন্তু উপরোক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় বাড়িটি মমতাজের নয় বরং ক্যাসিনো কান্ডে গ্রেফতার এনু-রুপন সহোদরের। তাই মমতাজের বাড়িতে অবৈধ টাকার গুদাম দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশন বিভ্রান্তিকর বলে বিবেচিত করেছে টিম চেক ফ্যাক্ট।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি