সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ৪ জন শিশু এসে একটি মেয়ের মাথায় থাকা মুকুট খুলে নিয়ে মেয়েটির মাথায় পর্দা পরিয়ে হাঁটু গেঁড়ে নামাজের অবস্থায় বসিয়ে দিচ্ছে। ভিডিওটি ভারতের স্বাধীনতা দিবসে স্কুলের একটি চিত্র দাবি করে বলা হচ্ছে যে, জিহাদিদের খেলা এখন স্কুলে শুরু হয়েছে এবং জাতীয় সঙ্গীত ও প্রার্থনার বদলে জোর করে নামাজ শেখানো হচ্ছে স্কুলগুলোতে। এমন দাবিতে বেশকিছু পোস্ট সামনে আসার পর ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্য
গত আগস্ট ১৬, ২০২২ তারিখে Kakali Bisui নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে উক্ত ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,
এই দেখুন, এই জিহাদিদের খেলা এখন স্কুলেও শুরু হয়েছে, ১৫ই আগষ্টে স্কুলের অনুষ্ঠানে ভারত মাতার যে সেজেছিল তার মাথা থেকে মুকুট সরিয়ে নাওজি চাদর পরিয়ে দিচ্ছে। জাতীয় সঙ্গীত প্রার্থনা বদলে নামাজ শেখানো হচ্ছে, এই সবই কি স্কুলগুলির যোগসাজেশ!!
এমন দাবিতে আরও পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধান
অনুসন্ধানের শুরুতেই ভাইরাল ভিডিওটি থেকে বেশ কিছু ফ্রেমে স্ক্রিনশট নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Ajj Tak এর একটি লিংক সামনে আসে। লিংকটিতে প্রবেশ করে দেখা যায় এটি একটি হিন্দি প্রতিবেদন এবং প্রতিবেদনে যুক্ত ছবিটির সাথে ভাইরাল ভিডিওর অংশের হুবুহু মিল আছে। গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে উক্ত পেজটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করলে দেখা যায়, সংবাদটির শিরোনামে উল্লেখ আছে,
Accused of offering Namaz by taking off the crown of Mother India, Lucknow Police told the truth অর্থাৎ মাদার ইন্ডিয়ার মুকুট খুলে জোর করে নামাজ পড়ানোর অভিযোগ, লখনউ পুলিশ সত্যটা বলেছে
পরবর্তীতে প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশ পড়ে দেখা যায়, ভিডিওটি ভারতের উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ শহরের বাজার খালা থানার অন্তর্গত ’শিশু ভারতীয় বিদ্যালয়’এর । স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীরা “চার ছেলে”নামের একটি নাটক পরিবেশন করেছিল যেখানে ভারত মাতার চরিত্রে থাকা মেয়েটি সব ধর্মের রীতি নিয়ম পালন করে দেখিয়েছিল এবং সব ধর্মের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিল।
এই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ইউটিউবে সার্চ করলে TV9 Uttar Pradesh UttaraKhand নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণটি পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, মঞ্চে থাকা বাচ্চারা প্রথমে হিন্দু ধর্ম অনুসারে পুজা করে, তারপর মুসলিম বেশে নামাজ আদায় করে এবং পরে শিখ ও খ্রিস্টান ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করে। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি অসম্পূর্ণ। কেউ মূল ভিডিওর একটি ছোট ক্লিপ শেয়ার করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে।
তাছাড়া গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে লখনউ পুলিশ কমিশনারের টুইটার একাউন্টে ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। ভাইরাল ভিডিও ক্লিপটির মূল ভিডিও শেয়ার করে পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, Full video of drama presented by small children for communal harmony, which has been wrongly propagated by some anti-social elements and criminal act of spreading communal hatred has been done. Strict legal action will be taken against such people.
অর্থাৎ “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ছোট শিশুদের পরিবেশন করা নাটকের ভিডিওটিকে নিয়ে কিছু অসামাজিক অপপ্রচার চালিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অপরাধমূলক কাজ করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘’
সুতরাং উপরোক্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, জাতীয় সঙ্গীত ও প্রার্থনার বদলে ভারতের স্কুলগুলোতে নামাজ শেখানো হচ্ছে দাবিতে যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তা সত্য নয়। মূলত স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা নাটক পরিবেশন করেছিল যেখানে ভারত মাতার চরিত্রে থাকা মেয়েটি সব ধর্মের রীতি নিয়ম পালন করে দেখিয়েছিল এবং সব ধর্মের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিল। পরবর্তীতে মূল ভিডিওর ছোট একটি ক্লিপ কোন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী শেয়ার করলে তা বিভ্রান্তিকর দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি