‘কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই, তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন!’ সম্প্রতি একটি নিউজ পোর্টালে এমন শিরোনামে একটি সংবাদ ভাইরাল হয়েছে। তবে মূলধারার গণমাধ্যমে এরকম কোনো তথ্য না থাকায় বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। তাই প্রকৃত ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান চালায় টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে ফ্রেশনিউজ নামক একটি ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই তিনি না ফেরার দেশে পারি জমিয়েছেন!!! শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রবীর মিত্রের মৃত্যুর খবরটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
সংবাদের এই লিংকটি ব্যাপক ভাইরাল হয়। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পরে। এইরকম অসংখ্য পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
শুরুতে প্রবীর মিত্র সংক্রান্ত সংবাদ খুঁজতে শুরুতেই গুগল কী ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালায় টিম চেক ফ্যাক্ট। কিন্তু মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমেই প্রবীর মিত্রর মৃত্যু সংক্রান্ত কোন সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে ১২ আগস্ট ২০২২ তারিখে Channel I Online এর একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। যার শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, প্রবীর মিত্রের ঘরবন্দি জীবন, ফিরতে চান অভিনয়ে । সেখানে উল্লেখ করা হয়,
“তার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে টিভি দেখে। ঘরবন্দী থাকলেও মন পড়ে থাকে এফডিসি ও শুটিংয়ে। প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন মিত্র জানান, তার বাবার শ্রবণ শক্তি দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। সে কারণে তিনি ঠিকমত কানে শুনতে পান না। উচ্চস্বরে কথা বললে উত্তর দিতে পারেন। তবে তিনি ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করতে পারেন।”
তাছাড়া ১২ আগস্ট সময়ের আলো নিউজের এক প্রতিবেদনে শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, অভিনয় জীবন মিস করেন প্রবীর মিত্র। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলা চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেতা প্রবীর মিত্র। বয়সজনিত কারণে দীর্ঘদিন অভিনয়ের বাইরে আছেন। ৮১ বছর বয়সী এই অভিনেতার শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। তার দিন কাটছে ঘরে হুইল চেয়ারে বসে কিংবা বিছানায় শুয়ে।
তাছাড়া সম্প্রতি মানব জমিন পত্রিকার এক নিউজে প্রবীর মিত্রর বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়,
‘এফডিসিতে যাওয়ার জন্য মন ছটফট করে’
যেখানে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ বাংলা চলিচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। তিনি অস্টিওপরোসিস রোগে (হাড় ক্ষয়) আক্রান্ত। তবে দিল্লির হাসপাতালে পায়ের অস্ত্রোপচার হওয়ায় আগের তুলনায় ভালো আছেন। বর্তমানে বড় ছেলে মিথুন মিত্রের ধানমণ্ডির বাসায় থাকেন এই অভিনেতা।
সুতরাং, কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্রের মারা যাওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ গুজব।
মূলত, দীর্ঘদিন ধরে অস্টিওপরোসিস রোগে আক্রান্ত প্রবীর মিত্র। তবে সম্প্রতি ভারত থেকে চিকিৎসা করিয়ে আসায় আগের তুলনায় ভালো আছেন।কিন্তু কিছু ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে ৫ আগস্ট থেকে ‘প্রবীর মিত্র আর নেই’ – শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার শিরোনামের সাথে বিষয়বস্তুর কোনো মিল নেই।
প্রবীর মিত্র , স্কুলজীবনে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রহরীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন । পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়। প্রায় পাঁচ দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিতাস একটি নদীর নাম, দুই পয়সার আলতা, বড় ভালো লোক ছিল, বেদের মেয়ে জোসনাসহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৯৮২ সালে ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে তাকে।
সুতরাং সকল তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্রর বর্তমানে বড় ছেলে মিথুন মিত্রের ধানমণ্ডির বাসায় আছেন। ৮১ বছর বয়সী এই অভিনেতার শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। তার দিন কাটছে ঘরে হুইল চেয়ারে বসে কিংবা বিছানায় শুয়ে। তাই মারা যাওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ গুজব।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি