সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ভিডিওটি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার। ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, মূলত রাতের আঁধারে ৮টি হিন্দুদের বাড়িঘর এবং দোকানে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়। এমন দাবিতে ভিডিওটি সামনে আসার পর এর সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে টিম চেক ফ্যাক্ট।
ভাইরাল তথ্যঃ
গত আগস্ট ২৩, ২০২২ তারিখে Tamal Chakroborti নামের ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়,
গতকাল রাতে কিশোরগঞ্জে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে
হিন্দুদের উপর তাদের ঘর বাড়ির উপর।
এইবার মহামান্য রাষ্ট্রপতির জেলা কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চণ্ডিবের গ্রামে রাতের আধারে ৮ টি হিন্দু বাড়িঘর ও দোকানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে 😭
বর্তমানে দেশে সংখ্যালঘুদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। সরকার যদি এখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে না পারেন, তাহলে যেখানে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তা পাবো সেখানে স্থানান্তর করুন।
এইভাবে জীবন যাপন করা যায় না।😭😭❤️
একই দাবিতে ফেসবুকে এরকম আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে
চেক ফ্যাক্ট অনুসন্ধানঃ
অনুসন্ধানের প্রথম ধাপে সম্প্রতি কিশোরগঞ্জে কোন সাম্প্রদায়িক হামলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে কী-ওয়ার্ড সার্চ করা হলে এমন কোন সংবাদ খুঁজে পায়নি টিম চেক ফ্যাক্ট। পররবর্তীতে টিম চেক ফ্যাক্ট ভাইরাল ভিডিওটি থেকে বিভিন্ন ফ্রেমে ছবি সংগ্রহ করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে Narsingdir Konthosor নামক ফেসবুক পেজ থেকে ২২ আগস্ট, ২০২২ তারিখে প্রকাশিত একটি পোস্টে ভিডিওটি খুঁজে পায়। Narsingdir Konthosor নামের স্থানীয় গণমাধ্যমের ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি নরসিংদীর ঘোড়াশাল অগ্নিকাণ্ডে ৪ দোকান পুড়ে যাওয়ার দাবি করে বলা হয়,
গত ২১ আগষ্ট দিবাগত রাতে নরসিংদীর ঘোড়াশালে অগ্নিকাণ্ডে ৪টি দোকান পর ছাই হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি এ আগুনে তাদের প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার রাত সোয়া ৩টার দিকে পৌর এলাকার ধলাদিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, রাতে বাজারের একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। রাতেই খবর পেয়ে পলাশ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে ওই বাজারের একটি মুদী দোকান ও প্লোট্রি ফিডের দোকানসহ ৪টি দোকান ও মালামাল সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
এছাড়া অন্যান্য বেশকিছু ফেসবুক পোস্টেও এটিকে নরসিংদীর ঘোড়াশালের অগ্নিদুর্ঘটনা বলে দাবি করা হয়। পোস্টগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
পরবর্তীতে নরসিংদীর কন্ঠস্বর এর পোস্ট এর সূত্র ধরে কী-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যমগুলোতে সম্প্রতি নরসিংদীর ঘোড়াশালে অগ্নিদুর্ঘটনার কিছু সংবাদ খুঁজে পায় টিম চেক ফ্যাক্ট। ২২ আগস্ট, ২০২২ তারিখে প্রতিদিনের সংবাদ নামক গণমাধ্যমে ঘোড়াশালে আগুনে চার দোকান ছাই শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে আগুনে ৪টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ২১ আগস্ট রবিবার রাত সোয়া তিনটার দিকে ধলাদিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র জানা যায়, রাতে বাজারের একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। খবর পেয়ে পলাশ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সেখানে আসে এবং প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রতিবেদনে অগ্নিকান্ডের দৃশ্যের একটি ছবি খুঁজে পায় টিম চেক ফ্যাক্ট যে ছবিটির সাথে সাম্প্রদায়িকতার দাবিতে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্যের সাদৃশ্যতা খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া আরো কিছু গণমাধ্যমে নরসিংদীর ঘোড়াশালে অগ্নিকান্ডের সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে প্রতিবেদনে অগ্নিকান্ডের যেই ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তার সাথে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্যের হুবুহু মিল রয়েছে। প্রতিবেদনগুলো পড়ুন এখানে, এখানে।
উপরোক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবিষয়টি স্পষ্ট যে, ভাইরাল ভিডিওটি মূলত গত ২১শে আগস্ট নরসিংদীর ঘোড়াশালে অগ্নিকান্ডে দোকান পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য। উক্ত ভিডিওটিকে মিথ্যা দাবিতে কিশোরগঞ্জের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
মন্তব্য (0)
দুঃখিত ! কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি